অনলাইন ট্রেনিং

অনলাইন ট্রেনিং

অনলাইন ট্রেনিং কিছুমাস পূর্বে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে হঠাৎ এক্সিডেন্টে পা ভেঙে যায় অনির। তারপর থেকে সে ছিল হসপিটালাইজড। ডাক্তারের কথায় পুরো একমাস থাকতে হবে বেডরেস্টে।

ওহ্ অনি কে সেটাই তো বলা হল না। অনির পুরো নাম মুশফিকা আক্তার অনি, দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সামনে তার এসএসসি পরীক্ষা। একমাস পরে তার পা ঠিক হয়ে যাবে এটা যেমন খুশির খবর, তেমনি এই একমাস সে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাসগুলো করতে পারবে না এটা নিয়েও অনি খুব চিন্তিত। মনে মনে সে ভাবছিলো, “ইস্ হাসপাতালে বসেই যদি ক্লাসগুলো করতে পারতাম!!!” প্রযুক্তিগত প্রসার বর্তমানে এতটাই সম্প্রসারিত যে একসময়কার মানুষের কাল্পনিক চিন্তাগুলোকেও দিচ্ছে বাস্তবিক রূপ। সেই বাস্তবিক রূপের বাইরে নেই হাসপাতাল বা পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে ক্লাস করার সুযোগ। অর্থাৎ যেকোনো যায়গাই হতে পারে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহন ও শিক্ষা বিতরণ এখন মুহূর্তের ব্যাপার মাত্র। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ই-লার্নিং বা অনলাইন ট্রেনিং এখন বহুল প্রচলিত হলেও বাংলাদেশের এর প্রচলন কেবল হাঁটি হাঁটি পা পা মাত্র।

চলুন জানা যাক অনলাইন প্রশিক্ষণ বা ই-লার্নিং কী? – ইন্টারনেটের সাহায্যে নিজের অবস্থান থেকে ভিডিও বা অনলাইনের মাধ্যমে মোবাইল বা কম্পিউটার ডিভাইস দ্বারা পৃথিবীর যেকোনো জায়গার ক্লাসে অংশগ্রহণ করাকে আমরা বলতে পারি অনলাইন ট্রেনিং বা ই-লার্নিং যা শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়ে এসেছে আমূল-পরিবর্তন। ইন্টারনেটের বদৌলতে পুরো বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। হাতের মুঠোয় আনার সাথে সাথে বেড়েছে অনলাইনের ব্যবহার। আর এই অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য তৈরী করেছে এক অভাবনীয় প্লাটফর্ম, “অনলাইন ট্রেনিং বা ই-লার্নিং”।

অনলাইন ট্রেনিং এর ব্যাপারে আপনার কী মতামত? জানাবেন কমেন্ট সেকশনে। মানবজাতি বরাবরই নতুনত্বে আকৃষ্ট। সার্বিক দিক বিবেচনায় শিক্ষা ক্ষেত্রে নতুন এই সিস্টেমের প্রভাব কেমন হতে পারে? আর্শীবাদ সরূপ নাকি অভিশাপ? নিজস্ব অভিমত পোষণ করে এতটুকু বলতে পারি যে গ্রাম থেকে শহরের প্রত্যেকটি জায়গার ইন্টারনেট গতি যদি পুরোপুরি ঠিক করা সম্ভব হয় তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ হতে পারে একটি মুক্ত অনলাইন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা ই-লার্নিং পয়েন্ট। এখানে অনেকে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন যে পোলাপানের তো আর খেয়ে কাজ নাই ইন্টারনেট পাইলে পড়াশোনা শুরু করে দিবে!! না, আমার বলার উদ্দেশ্য এটা না যে সবাই পড়াশোনা শুরু করবে। বোঝার সহজ উপায়ঃ ধরুন আপনি রসায়ন বিষয়ে বেশ কাঁচা, প্রাইভেটে অনেকে স্যারের লেকচার বুঝলেও আপনার বুঝতে খানিক সমস্যা হচ্ছে। মানুষ যেমন সবাই এক না, তেমনি মানুষের মতিষ্ক বা ধারণ ক্ষমতা, বোঝার ক্ষমতা এক না। আপনি কম বা সেই লেকচার না বুঝতেই পারেন, এটা অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু পরীক্ষায় ভালো করতে চাইলে তো সেই বিষয়টি পড়তে হবে, বুঝতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনি দেখলেন যে অনলাইনে একজন শিক্ষক রসায়ন বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছেন এবং স্যারের পাঠ প্রদানের টেকনিকটা খুব সহজেই আপনি বুঝতে পারছেন।

এখানে লক্ষনীয় দিকটি হল অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করে বাসায় শান্তভাবে মনোযোগ দিয়ে ক্লাসটি করাতে না বোঝা বিষয়টি খুব সহজেই বুঝে গেলেন, এবং যদি কোনো টপিক বুঝতে কষ্ট হয় তবে ক্লাসটির রেকর্ডেড ভিডিও বার বার দেখে স্পষ্ট ধারণা নিলেন। কোচিং প্রথার বিকল্পরূপঃ বাংলাদেশের একটি ট্রেন্ড বা প্রয়োজনও বলতে পারেন, প্রাইভেট বা কোচিং সেন্টার। প্রাইভেটবাবদ প্রতিমাসে একেকজন শিক্ষার্থীর পেছনে খরচ হয় অনেকগুলো টাকা। অনেকের হয়ত প্রাইভেট বা কোচিং এ পড়ার সামর্থ্য নেই। সেখানে তারা স্বল্প টাকা ব্যয় করে নিতে পারেন অনলাইন ট্রেনিং। এমন অনেক সংস্থাও রয়েছে যারা বর্তমানে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ের ফ্রী ক্লাস নিয়ে থাকেন। সুতরাং অনলাইন ট্রেনিং হতে পারে আপনার প্রাইভেট বা কোচিং এর সহজ ও সুবিধাজনক বিকল্প। জ্যাম ঠেলে, ক্লান্ত শরীর নিয়ে ট্রেনিং সেন্টারে গিয়ে মনোযোগ ধরে রেখে ক্লাস করার চেয়ে অনলাইনে নিজের বাসায় বসে ক্লাস করা ঢের ভালো। ফলে সময় নষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইন্টারন্যাশনাল ক্লাস করার সুযোগঃ বাংলাদেশে বসে শুধু বাংলাদেশের অনলাইন ক্লাস করা যাবে, অন্যদেশের প্রশিক্ষকের ক্লাস করা যাবেনা, বিষয়টা মোটেও এমন না। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের ট্রেনিং করা সম্ভব ই-লার্নিং দ্বারা। এমন কিছু আন্তর্জাতিক সুনামধন্য অনলাইন প্রতিষ্ঠান হল Udemy, Coursera, edX etc. নিজের সময়েই করুন ক্লাসঃ প্রতিযোগীতার এ যুগে নিজের স্কিল ডেভেলপ করা একটি চরম প্রয়োজনীয়তার নাম। দক্ষতা আপনার কাজের স্থানকে নিয়ে যাবে কয়েক ধাপ এগিয়ে। তাই দক্ষতা অর্জন করতে নির্দিষ্ট বাঁধাধরা কোনো সময় প্রয়োজন হয় না অনলাইন ক্লাস করার জন্য। নিজের সুবিধা অনুযায়ী সময়ে করতে পারেন অনলাইন ক্লাস। দক্ষতা অর্জনে নেই কোনো বাধাধরা নিয়মঃ আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি এমন যে সিলেবাসে যা আছে তাই জানতে হবে। ই-লার্নিং এই পদ্ধতিকে খুব সহজেই টেক্কা দিতে পারে। কারণ এখানে নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। নিজের লক্ষ্য স্থির করে সেই বিষয়ে ট্রেনিং নিয়ে নিজেকে দক্ষ করা সম্ভব। অনলাইন ক্লাস বা ই-লার্নিং এ তথাকথিত প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের কোনো বাধা নেই। ই-লার্নিং পৃথিবীকে তৈরী করতে পারে একটি মুক্ত শিক্ষাকোষ হিসেবে। আমাদের বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। বাংলাদেশের বিভিন্ন আইটি সেন্টারগুলো তরুণ প্রজন্মকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষা প্রদানের উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যে তাদের ট্রেনিং পদ্ধতিকে করেছে অনলাইনের আওতাভুক্ত। এছাড়াও কিছু অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত অনলাইনে ট্রেনিং প্রদান করছেন। ফলে আগ্রহীরা নিজেদের পছন্দ মত যেকোনো বিষয়ে কাজ শিখে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারবে খুব সহজেই।

Chat conversation end

Type a message…

Share